নামকরণ
প্রথম আয়াতের —– শব্দটিকে এ সূরার শিরোনাম করা হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এটি সেই সূরা যার মধ্যে ফাতের’ শব্দটি এসেছে। এর অন্য নাম—– এবং এ শব্দটিও প্রথম আয়াতেই ব্যবহৃত হয়েছে।
নাযিলের সময়- কাল
ব্যক্তব্য প্রকাশের আভ্যন্তরীণ সাক্ষ থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, সম্ভবত মক্কা মু’আযযমার মধ্য যুগে সূরাটি নাযিল হয়। এ যুগেরও এমন সময় সূরাটি নাযিল হয় যখন ঘোরতর বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল এবং নবী (সা) এর দাওয়াতকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য সব রকমের অপকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছিল।
বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
বক্তব্যের উদ্দেশ্য হচ্ছে, নবী করীম (সা)এর তাওহীদের দাওয়াতের মোকাবিলায় সে সময় মক্কাবাসীরা ও তাদের সরদার বৃন্দ যে নীতি অবলম্বন করেছিল, উপদেশের ভংগীতে সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক ও তিরস্কার করা এবং শিক্ষকের ভংগীতে উপদেশ দেয়াও। বিষয়বস্তুর সংক্ষিপ্ত সার হচ্ছে, হে মূর্খেরা ! এ নবী যে পথের দিকে তোমাদেরকে আহবান করছেন তার মধ্যে রয়েছে তোমাদের নিজেদরে কল্যাণ। তার বিরুদ্ধে তোমাদের আক্রোশ, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্র এবং তাকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য তোমাদের সমস্ত ফন্দি-ফিকির আসলে তাঁর বিরুদ্ধে নয় বরং তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই চলে যাচ্ছে। তার কথা না মানলে তোমারা নিজেদেরই ক্ষতি করবে, তার কিছু ক্ষতি করতে পারবে না। তিনি তোমাদের যা কিছু বলছেন সে সম্পর্কে একটু চিন্তা করে দেখো তো, তার মধ্যে ভুল কোনটা? তিনি শিরকের প্রতিবাদ করছেন। তোমরা নিজেরাই একবার ভাল করে চোখ মেলে তাকাও। দেখো, দুনিয়ায় শিরকের কি কোন যুক্তিসংগত কারণ আছে? তিনি তাওহীদের দাওয়াত দিচ্ছেন। তোমরা নিজেরাই বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তাভাবনা করে দেখো, সত্যিই কি পৃথিবী ও আকাশ মন্ডলীর স্রষ্টা আল্লাহ ছাড়া আর এমন কোন সত্তার অস্তিত্ব আছে যে আল্লাহর গুণাবলী ও ক্ষমতার অধিকারী? তিনি তোমাদেরকে বলছেন, এ দুনিয়ায় তোমরা দায়িত্বহীন নও বরং তোমাদের নিজেদের আল্লাহর সামনে নিজেদের কাজের হিসেব দিতে হবে এবং এ দুনিয়ার জীবনের পরে আর একটি জীবন আছে যেখানে প্রত্যেককে তার কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে হবে। তোমরা নিজেরাই চিন্তা করো, এ সম্পর্কে তোমাদের সন্দেহ ও বিস্ময় কতটা ভিত্তিহীন। তমাদের চোখ কি প্রতিদিন সৃষ্টির পুরনাবৃত্তি প্রত্যেক্ষ করছে না? তাহলে যে আল্লাহ এক বিন্দু শুক্র থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন তাঁর জন্য তোমাদেরকে পুনরায় সৃষ্টি করা আবার অসম্ভব হবে কেন? ভালো ও মন্দের ফল সমান হওয়া উচিত নয়, তোমাদের বুদ্ধিবৃত্তি কি একথার সাক্ষ দেয় না? তাহলে তোমরাই বলো যুক্তিসংগত কথা কোনটি ভালো ও মন্দের পরিণাম সমান হোক? অর্থাৎ সবাই মাটিতে মিশে শেষ হয়ে যাক? অথবা ভালো লোক ভালো পরিণাম লাভ করুক এবং মন্দ লোক লাভ করুক তার মন্দ প্রতিফল? এখন তোমরা যদি এ পুরোপুরি যুক্তিসংগত ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত কথাগুলো না মানো এবং মিথ্যা খোদাদের বন্দেগী পরিহার না করো উপরন্তু নিজেদেরকে অদায়িত্বশীল মনে করে লাগাম ছাড়া উটের মতো দুনিয়ার বুকে বেঁচে থাকতে চাও, তাহলে এতে নবীর ক্ষতি কি? সর্বনাশ তো তোমাদেরই হবে। নবীর দায়িত্ব ছিল কেবলমাত্র বুঝানো এবং তিনি সে দায়িত্ব পালন করেছেন ।
বক্তব্যের ধারাবাহিক বর্ণনায় নবী করীম (সা) কে বারবার এ মর্মে সান্তনা দেয়া হয়েছে যে, আপনি যখন উপদেশ দেবার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করছেন তখন গোমরাহির ওপর অবিচল থাকতে যারা চাচ্ছে তাদের সঠিক পথে চলার আহবানে সাড়া না দেবার দায় আপনার ওপর বর্তাবে না। এই সাথে তাকে একথা ও বুঝানো হয়েছে যে, যারা মানতে চায় না তাদের মনোভাব দেখে আপনি দুঃখ করবেন না এবং তাদের সঠিক পথে আনার চিন্তায় নিজেকে ধ্বংস করেও দেবেন না। এর পরিবর্তে যেসব লোক আপনার কথা শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে তাদের প্রতি আপনার দৃষ্টি নিবন্ধ করুন।
ঈমান আনয়নকারীদেরকেও এ প্রসংগে বিরাট সুসংবাদ দান করা হয়েছে। এভাবে তাদের মনোভাব বাড়বে এবং তারা আল্লাহর প্রতিশ্রুতির প্রতি আস্থা স্থাপন করে সত্যের পথে অবিচল থাকবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-